ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে  লাখ লাখ টাকা  আত্মসাৎ চক্রের ৯ সদস্য আটক 

মনির হোসেন জীবন

প্রকাশিত : ২১:২৭, ৩ এপ্রিল ২০২৪ | আপডেট: ২১:৩২, ৩ এপ্রিল ২০২৪

মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ) প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা প্রদানের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ৯ সদস্যকে আটক করেছে র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। র‍্যাব সূত্র জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার ভাংগা থানা এলাকায় পৃথক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

র‍্যাব আরও জানিয়েছে, এ চক্রটি গত প্রায় এক বছর যাবৎ  দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক সাধারন মানুষের নিকট থেকে বয়স্ক ভাতা, বিধাব ভাতা ও উপবৃত্তি প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ২০/২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে স্বীকার করেছে। র‍্যাব বলছে,  সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারে, কতিপয় প্রতারক চক্র বেশ কিছুদিন যাবৎ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান ও মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ/নগদ) ব্যবসায় অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে বিকাশ/নগদের মাধ্যমে মানুষকে প্রতারিত করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। 

বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্হ র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১০ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) এ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন এসব তথ্য জানান।  সংবাদ সম্মেলনে  র‍্যাবের অন্যান্য উধর্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্হিত ছিলেন। 

এ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান,  গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় র‌্যাব-১০ এর একটি  দল  গতকাল রাতে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা এলাকায় একটি সাঁড়াশি অভিযান চালায়। ওই  অভিযানে সাধারণ মানুষকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদানের নামে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে প্রতারিত করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের অন্যতম মূল হোতা  ইসমাইল মাতুব্বর (২১)সহ ৪ জনকে আটক করে। বাকী ৩ জন হলো, ইব্রাহীম মাতুব্বর (২৭),  মোঃ মানিক  ওরফে  মতিউর রহমান (১৯), ও মোঃ সিনবাদ হোসেন (২৪)।

এছাড়া অপর অভিযানে আটকরা ব্যক্তিরা হলো, এ চক্রের অন্যতম মূল হোতা  মোঃ সুমন ইসলাম (২০), মাহমুদুল হাসান পলক (২০), সাব্বির খন্দকার (১৯), মো:  সাকিব (১৯) ও রাসেল তালুকদার (২৩)। আটক ব্যক্তিরা ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা  ও মাদারীপুর জেলায়  তাদের গ্রামের বাড়ি বলে জানা গেছে।  এ সময় তাদের নিকট থেকে  ৩৬টি মোবাইল ফোন, ১২৬টি সিম কার্ড, ৫টি মোবাইলের চার্জার, ১টি ল্যাপটপ, ১০৪টি ইয়াবা ট্যাবল,
১টি ব্যাগ ও নগদ-৮২,৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে র‍্যাব জানান, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ এর একটি  দল জানতে পারে উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নামে একটি প্রতারক চক্রর কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানা এলাকায়  মোঃ বাবুলের পুত্র  বসবাসকারী ভিকটিম ইসতাহাদ উদ্দিন সোহান (১৯) গত ২২ মার্চ ২০২৪ বিকেল আনুমানিক  সাড়ে ৩ টার দিকে কল দিয়ে তার নাম্বারে উপবৃত্তির টাকা পাঠাবে বলে কৌশলে তার বিকাশের পিন নাম্বার নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ওই প্রতারক চক্র সর্বমোট ৩৮,২৫৮ টাকা তার একাউন্ট থেকে সরিয়ে ফেলে। সে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করে। এছাড়া গত ২৪ মার্চ ২৪ তারিখ কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানায় জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক শিক্ষাথীর কাছ থেকে একই প্রতারক চক্র ২০,৪০০ টাকা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানা এলাকার লোকমান হোসেন (৪৪) এর কাছ থেকে তার ছেলের নামে উপবৃত্তির কথা বলে ১৬৩০০ টাকা প্রতারনা করে। 

মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, এছাড়া প্রতারক চক্রটি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২৪ তারিখ আব্দুল মমিন (৪২) নামক একজন নতুন বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে প্রতারনার মাধ্যমে ৪২,৭৭৭ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর ভিকটিম মমিন উক্ত প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ডিএমপি ঢাকার ডেমরা থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করে। ওই জিডির সূত্র ধরে একই তারিখ রাতে র‌্যাব-১০ এর দু'টি  দল ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার ভাংগা এলাকায় অপর দু'টি অভিযান পরিচালনা করে মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ/নগদ) ব্যবসায় অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে এজেন্টদের নিকট থেকে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে প্রতারিত করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের অন্যতম মূল হোতা  মোঃ সুমন ইসলাম (২০)সহ ৫ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত ইসমাইল মাতুব্বর সাধারণ মানুষকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদানের নামে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে প্রতারিত করে অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রটির মূল হোতা। তার নেতৃত্বে পরষ্পর যোগসাজসে চক্রটি প্রায় দুই বছর যাবৎ সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। নিরিবিলি স্থান হিসেবে তারা দক্ষিণ কেরাণীগনঞ্জ এলাকায় বেছে নেয় যাতে নির্বিঘ্নে প্রতারণার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। তারা প্রথমে উপবৃত্তির ওয়েবসাইট থেকে উপবৃত্তির তালিকা সংগ্রহ করতো। পরবর্তীতে ইসমাইল প্রথমে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ক্লোন করে বিকাশ/নগদ একাউন্ট খোলা ভিকটিমদের বিভিন্ন মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে নিজেকে শিক্ষা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদানের কথা বলে প্রলুব্ধ করে। এরপর বিকাশ/নগদের ওটিপি সংগ্রহ করত। ওই ওটিপির মাধ্যমে তারা ভিকটিমদের বিকাশ/নগদ একাউন্ট হ্যাক করে অন্য একাউন্টে স্থানান্তর করার মাধ্যমে ভিকটিমদের টাকা আত্মসাৎ করত। একইভাবে তারা একাধিক ভিকটিমের বিকাশ/নগদ একাউন্টের পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করে রাখতো এবং একটি মোবাইলে একাধিক বিকাশ/নগদ অ্যাপস ডাউনলোড করে একাউন্টে লগইন করে রাখতো।  

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, এই চক্রটি ২ বছর যাবৎ দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৬০-৭০ জন বিকাশ/নগদ এজেন্ট ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে তারা র‍্যাবকে জানিয়েছে। তারা সবাই স্বল্প সময়ে কোটিপতি হবার আশায় এবং মাদক সেবনের অর্থ যোগান দিতে এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি